ডিম উৎপাদনে প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়সমূহ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK
17
17

৪.১.৪ ডিম উৎপাদনে প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়সমূহ (Factors affecting eggproduction )

মুরগির ডিম উৎপাদনের সাথে বা ডিম উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার সাথে যে বিষয়গুলো জড়িত সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ 

১. খাদ্য: 

খাদ্য উপাদানে পরিবর্তন ঘটলে, যেমন- খাদ্যে গম বা ভুট্টা প্রদান না করলে অথবা নতুন কোনো উপাদান হঠাৎ বেশি দিলে, খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটলে যেমন, ম্যাশ খাবারের পরিবর্তে পিলেট খাবার প্রদান করলে, খাদ্য প্রদানের সময় পরিবর্তন করলে ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ডিম উৎপাদন কমে যেতে পারে। 

২. খাদ্যমানঃ 

খাদ্যের গুণাগুণ ভালো না হলে, প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যে সব উপাদান না থাকলে এবং খাদ্যে কোনো দোষ দেখা দিলে আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম ইত্যাদির অভাব হলে ডিম উৎপাদন কমে যেতে পারে । 

৩. পানি: 

পর্যাপ্ত পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কোনো কারণে বন্ধ থাকলে ডিম উৎপাদন কমে যায়।

৪. মেঝের জায়গা: 

ঘরে প্রয়োজন অনুযায়ী জায়গা কম থাকলে, মুরগির ঘনত্ব বেশি হলে বা গাদাগাদি হলে বা ঠোকরা-ঠুকরি করলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। 

৫. তাপমাত্রাঃ 

অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা মুরগি সহ্য করতে পারে না। ঘরের তাপমাত্রা ৫০° ফা. এর কম বা ৮০° ফা. এর বেশি হলে ডিম উৎপাদন হঠাৎ কমে যেতে পারে বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মুরগি সাধারণত ৭০° ফা. তাপমাত্রায় কাম্য হারে ডিম পাড়ে। 

৬. উত্তেজনা ও ভয়: 

মুরগি হঠাৎ স্থান পরিবর্তন করলে, এক ফার্ম থেকে অন্য ফার্মে নিলে, এমনকি এক ফার্মে অভ্যন্তরে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে নিলে, নতুন কোনো অতিথি দর্শনার্থী বা একসঙ্গে বেশি লোক, বন্য জীব জন্তু বা যানবাহন, অস্বাভাবিক শব্দ ইত্যাদি হতে আতঙ্কিত হয় বা ভয় পায়। ফলে ডিম উৎপাদন ব্যাহত হয় । 

৭. কুঁচে ভাব ও পালক বদলানো: 

মুরগির মধ্যে কুঁচে ভাব দেখা দিলে বা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পালক বদলালে উৎপাদন কমে যায়। পালক বদলানোর শুরুতে পালক বদলানো বন্ধ করার জন্য উচ্চ আমিষ যুক্ত খাদ্য প্রদান করতে হবে।

৮. রোগ-ব্যাধি: 

মুরগির ঝাঁকে কোনো রোগব্যাধি দেখা দিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়। মুরগির মধ্যে কৃমি থাকলে এবং উকুন, মাইট ও টিকের আক্রমণ হলে এদের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায় এবং উৎপাদন কমে যায়। ককসিডিওসিস, রাণীক্ষেত, ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস, এগড্রপ সিনড্রম ইত্যাদি রোগ হলে ডিমের সংখ্যা কমে যায়। 

৯. বংশগত দোষ : 

বংশগতভাবে কোনো কোনো মুরগির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের দোষত্রুটি থাকতে পারে। যেমন- কিছু মুরগি ২-৩ দিন পর পর ডিম দেয়। আবার কিছু মুরগি আছে দীর্ঘদিন পর পর ডিম দেয়। 

১০. আলো নিয়ন্ত্রণ: 

ডিমপাড়া মুরগির ঘরে ১৬ ঘণ্টা আলো প্রদানের পরিবর্তে কম আলো প্রদান করলে ডিম উৎপাদন আশানুরূপ হয় না । 

১১. মুরগির বয়সঃ 

সাধারণত ১৯-২০ সপ্তাহ বয়সে মুরগি ডিম দিতে শুরু করে এবং ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত একটানা গড়ে ৭৫- ৮৫% ডিম দিয়ে থাকে। মুরগির ব্যস বেশি হলে ডিম উৎপাদন কমে যায় ৷

১২. ঋতু পরিবর্তন: 

শীতকাল খামার মালিকদের জন্য অধিক লাভের জন্য উপযুক্ত সময়। গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে মুরগি অধিক ডিম দিয়ে থাকে । 

১৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাঃ 

খামারে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়ম শৃঙ্খলাগুলো মেনে না চললে বা সার্বিক পরিচ্ছন্নতার অভাব ঘটলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে । 

১৪. ডিম পাড়া বাক্স: 

ডিমপাড়া বাক্স যদি পর্যাপ্ত সংখ্যায় না থাকে তবে মুরগির ডিম উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে এবং মেঝেতে ডিমপাড়ার হার বেড়ে যাবে । 

১৫. খাবারের পরিমাণ: 

খাবারের পরিমাণ যদি বেশি হয় তবে ফ্যাটি লিভার সিন্ড্রম দেখা যায়। ফলে ডিমের সংখ্যা প্রচন্ডভাবে কমে যায়। খাবারের পরিমাণ যদি কম হয় তাহলেও ডিমের সংখ্যা কমে যাবে। খাবারের পরিমাণ সঠিকভাবে দিলে এবং প্রোটিনের ভাগ যদি ঠিক থাকে তাহলে ডিমের সংখ্যা আবার বেড়ে যাবে । 

১৬. মুরগির দেহে হরমোনের অভাব হলে ডিম উৎপাদন কমে যায় ।

 

 

 

Content added || updated By
Promotion